স্পোর্টস ডেস্কঃ নিজেদের মাঠে এগিয়ে গিয়েও পারল না বার্সেলোনা; রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হলো রিয়াল মাদ্রিদের। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর গোলে কাম্প নউ থেকে ২-১ ব্যবধানের দারুণ এক জয় নিয়ে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
লা লিগার মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে হারের প্রতিশোধও নেওয়া হলো রিয়ালের। সেই সঙ্গে থামল লুইস এনরিকের দলের ৩৯ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর বিতর্কিত সিদ্ধান্তে গোল বাতিল, লাল কার্ড, দর্শনীয় সব গোল এবং একটুর জন্য গোল না হওয়ার উত্তেজনাময় সব মুহূর্ত- বিশ্বের সেরা দুই ক্লাবের লড়াইয়ের সব উপাদান দেখা গেল দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতির পর জেরার্দ পিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন কাম্প নউকে; টইটম্বুর গ্যালারিকে নিশ্চুপ করতে সময় নেননি করিম বেনজেমা। আর শেষ দিকে আসে রোনালদোর ওই জয়সূচক গোল।
প্রথমার্ধে অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে বাঁ দিক থেকে নেইমারের বানিয়ে দেওয়া বলে গোলের খুব কাছ থেকেও শট নিতে পারেননি সুয়ারেস।
১৭তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক ক্রসবারের সামান্য উপর দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর রাকিতিচের শট ডানে শুয়ে পড়ে ঠেকান রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
গুছিয়ে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে যেতেও দেরি করেনি রিয়াল। ২৫তম মিনিটে রোনালদোর জোরাল শট ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক ক্লাওদিও ব্রাভো। কিছুক্ষণ পর রোনালদোর ফ্রি-কিক যায় ক্রসবার উঁচিয়ে।
বিরতির ঠিক আগে রিয়ালের সবচেয়ে ভালো সুযোগটা নষ্ট করেন বেনজেমা। ডি-বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড।
৫৪তম মিনিটে মেসির আচমকা চিপে বল উপরের ডান কোণ দিয়ে জালে ঢুকছিল, কিন্তু দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে তা রক্ষা করেন নাভাস।
তবে দুই মিনিট পরই কাম্প নউকে আনন্দে ভাসান জেরার্দ পিকে। গায়ে লেগে থাকা পেপেকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ এক হেডে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন এই ডিফেন্ডার।
তবে রিয়ালও সমতা ফেরাতে সময় নেয়নি। ৬২তম মিনিটে পাওয়া সুযোগটি আর নষ্ট করেননি বেনজেমা। পুরো মাঠ জুড়ে খেলা মার্সেলোর বাড়ানো বলে টনি ক্রুসের শট দাভিদ আলবার পায়ে লেগে বল খানিকটা উপরে উঠেছিল। দর্শনীয় এক ওভারহেড কিকে বল জালে পাঠান বেনজেমা।
৮০তম মিনিটে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে গোল পায়নি রিয়াল। মার্সেলোর ক্রসে আলবাকে পরাস্ত করে লাফিয়ে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। আলবাকে ফাউলের অভিযোগে গোলটি দেননি রেফারি! টিভি রিপ্লে দেখে কোনোভাবেই এটাকে ফাউল মনে হয়নি।
৮৩তম মিনিটে সুয়ারেসকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় সের্হিও রামোসকে। তবে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও দমে যায়নি অতিথিরা।
একটু পরেই রোনালদোর শট ক্রসবারে লাগে। তবে ৮৫তম মিনিটে ঠিকই রিয়ালকে এগিয়ে দেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড। ডান প্রান্ত থেকে বেলের দারুন ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে খুব কাছ থেকে নীচু শটে জালে জড়িয়ে দেন এই মৌসুমে লা লিগার সবোর্চ্চ (২৯) এই গোলদাতা।
বার্সেলোনার ‘এমএসএন’ ত্রয়ীর মধ্যে মেসিই কেবল প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পেরেছেন। অন্যদিকে ‘বিবিসি’ নামে পরিচিত আক্রমণ ত্রয়ীর সবাই জ্বলে ওঠায় যোগ্যতর দল হিসেবেই রোমাঞ্চকর এই ক্লাসিকো জিতে নেয় রিয়াল। নেপথ্যে অবশ্য বড় কৃতিত্ব কোচ হিসেবে প্রথমবারের মতো বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়া জিদানের।
বার্সেলোনা শেষবার হেরেছিল গত ৩ অক্টোবর। ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারলেও শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে আছে লুইস এনরিকের দল। তবে দুর্দান্ত এই জয়ে রিয়ালের শিরোপা জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা টিকে থাকল। ৩১ ম্যাচে বার্সেলোনার পয়েন্ট ৭৬। ৭ পয়েন্ট পেছনে থেকে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল।
আগের ম্যাচে রিয়াল বেতিসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া আতলেতিকো মাদ্রিদ ৭০ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে।